Breaking news

এখানে প্রকাশিত প্রত্যেকটি লেখাকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ, গ্রহণযোগ্য তথা ব্যবহারিক করার জন্য আপনার মতামত অত্যন্ত জরুরী। আপনার মতামত সংশ্লিষ্ট লেখার নীচে আমরা প্রকাশ করব। এর পাশাপাশি আপনিও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লেখা পাঠাতে পারেন জনপ্রিয়তা নিরিখে শ্রেষ্ঠ লেখা কে আমরা সম্মানিত করব। আপনার মতামত এবং লেখা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাঁদিকে নীচে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ব্যবহার করুন।

গর্ভধারণ আকস্মিক নয় পরিকল্পিত হোক : পরিকল্পিত গর্ভধারণ সুস্থ ভবিষ্যতের প্রথম পদক্ষেপ



গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং তা যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরিকল্পিত হওয়া উচিত। গর্ভধারণ যদি পরিকল্পিত না হয়, তাহলে তা কেবল মা এবং শিশু নয়  পুরো পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরিকল্পিত গর্ভধারণ অপরিহার্য। পরিকল্পিত গর্ভধারণ একটি সুস্থ, সফল পরিবার গঠনের মূল ভিত্তি। অপরিকল্পিত গর্ভধারণে মা, শিশু এবং পরিবার সম্মুখীন হতে পারে নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সামাজিক সমস্যার।


পরিকল্পিত গর্ভধারণের প্রয়োজনীয়তা

স্বাস্থ্য সচেতনতার সুযোগ: পরিকল্পিত গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একজন নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। একজন গর্ভবতী মহিলার  খাদ্যাভ্যাস, ওজন, মনের অবস্থা ইত্যাদি গর্ভধারণের আগে থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগ থাকে। ফলস্বরূপ, গর্ভাবস্থার জটিলতা যেমন হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা:পরিকল্পিত গর্ভধারণে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে। গর্ভধারণের আগে নিয়মিত  স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়, যা মা ও শিশুর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলে । অপরিকল্পিত গর্ভধারণে এই সুযোগটি অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি :গর্ভধারণ  একটি বিশাল মানসিক দায়িত্ব। পরিকল্পিত গর্ভধারণের মাধ্যমে দম্পতি  মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার সময় পান, যা তাদের সন্তান জন্মের পর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে সহায়তা করে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণে এই মানসিক প্রস্তুতির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

পারিবারিক ও আর্থিক প্রস্তুতি:পরিকল্পিত গর্ভধারণে দম্পতিরা আর্থিকভাবে প্রস্তুত হতে পারেন। সন্তান লালন-পালন একটি বড় দায়িত্ব এবং তার জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিকল্পিত গর্ভধারণে অনেক সময় দম্পতিরা আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন না, যা তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

পরিবার পরিকল্পনা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ:পরিকল্পিত গর্ভধারণে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি মাথায় রাখা যায়। প্রত্যেক দম্পতিরই তাদের পরিবারের সীমারেখার মধ্যে  সন্তানদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার সুযোগ থাকে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে এবং সন্তানদের উপযুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ নষ্ট হতে পারে।

দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নতি: গর্ভধারণ যদি পরিকল্পিত হয়, তবে দম্পতিরা তাদের সম্পর্কের প্রতি আরো যত্নশীল হতে পারেন। তারা সন্তান ধারণের জন্য পরস্পরের সাথে খোলামেলা আলোচনা , যা সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণ অনেক সময় দম্পতিদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে, যা সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ঝুঁকি 

অপরিকল্পিত গর্ভধারণ অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত তো বটেই , সামাজিক ও মানসিক সমস্যার ও সৃষ্টি করতে পারে। 

শারীরিক ঝুঁকি: অপরিকল্পিত গর্ভধারণে মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে মা গর্ভধারণের জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকেন না, যার ফলে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন রোগ, জটিলতা বা এমনকি প্রসবকালীন জটিলতাও দেখা দিতে পারে। যেমন, প্রসবকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত, প্রি-একলাম্পসিয়া, গর্ভধারণজনিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি  পাশাপাশি ভয় শিশু মৃত্যুর : অপরিকল্পিত গর্ভধারণে মায়ের পুষ্টির ঘাটতি বা সঠিক চিকিৎসার অভাবে শিশু জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, যা নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এছাড়া অপরিণত অবস্থায় শিশুর জন্ম হলে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপ ও হতাশা: অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ফলে মায়ের ওপর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। গর্ভধারণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে মা হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। এসব মানসিক সমস্যা মায়ের সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং শিশুর ওপরও মানসিক চাপ তৈরি করে।

আর্থিক সংকট: অপরিকল্পিত গর্ভধারণ অনেক ক্ষেত্রে দম্পতিকে আর্থিক সংকটে ফেলতে পারে। সন্তানের লালন-পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে, যা বাবা-মায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।

সম্পর্কের অবনতি: অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ফলে দম্পতিদের মধ্যে মতবিরোধ ও সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। অনেক সময় মা বা বাবা কোনো একপক্ষ সন্তান গ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, যা সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কৈশোরে গর্ভধারণের ঝুঁকি: অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে অনেক সময় কিশোরী মায়েরা সন্তান ধারণ করতে বাধ্য হন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কৈশোরে গর্ভধারণ মায়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শিশুরও সুস্থভাবে জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। যা উভয়ের  স্বাস্থ্যের উপর মারাত্বক প্রভাব ফেলে। 

সামাজিক ও মানসিক সমস্যা: অপরিকল্পিত গর্ভধারণ অনেক সময় সামাজিক সমালোচনা এবং নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যখন গর্ভধারণ বিবাহবহির্ভূত হয়, তখন মায়ের সম্মানহানি, সামাজিক নিগ্রহ এবং মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়। সমাজের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মায়ের জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলে।


তাই গর্ভধারণ পরিকল্পনা মাফিক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পরিকল্পিত গর্ভধারণের জন্য চিকিৎসকের বা স্বাস্থ্য কর্মীর পরামর্শ যেমন জরুরি তেমনি গর্বধারণের পরে টি শিশুর অন্তত দুই বছর বয়স অবধি আপনার নিকটস্থ্  সরকারি স্বাস্থ্য কর্মী আশা দিদি বা অঙ্গনওয়াড়ি দিদির সাথে অবশ্যই নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের পরামর্শ মেনে চলুন । রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশন মা এবং শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য একাধিক যোজনা চালু করেছেন।  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.