ভারতের সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তিক্ততা শুধুমাত্র সীমান্ত সমস্যা নিয়েই নয় বিগত কয়েক দশক থেকে একের পর এক ভারত বিরোধী কার্যকলাপ দু'দেশের সম্পর্ককে ক্রমান্বয়ে জটিলতার চরম পর্যায়ে নিয়ে এসেছে । নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপ (NSG) এ ভারতের সদস্য পদের বিরোধিতা হোক কিংবা বিতর্কিত জায়গার উপর দিয়ে চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) স্থাপন অথবা ডোকলাম সমস্যা , সর্বত্রই ভারত বিরোধী আগ্রাসন ।সর্বোপরি সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া সীমান্ত সংঘর্ষ দু'দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুদ্ধের উপক্রম। এমত পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরে চীনা পণ্য বর্জনের জোয়ার এসেছে। বিভিন্ন লোক দেখানো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চীনা পণ্য বর্জনের কার্যকলাপ সামনে আসছে ফেসবুকের মত সোশ্যাল সাইটে বিদ্রুপ করে অনেকেই আবার লিখছেন "আমরা তো আর চীনে গিয়ে কিনে আনছি না সরকার যদি না চায় তাহলে চীনা পণ্য ভারতীয় বাজারে বিক্রি হবে কেন ?" বিষয়টা কতটা সংবেদনশীল তা দেখানোর জন্য কোথাও বা এমন পোস্ট চোখে পড়ে যে "আপনি কোন চীনা পণ্য কেনার অর্থ চীনকে একটা বুলেট স্পনসর্ড করা"।এই লেখাটা আমি যখন লিখবো বলে ভাবছি তখন আমি একটা স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম যেখান থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি ট্রেন পাস করলো যা সৈনিকদের নিয়ে সীমান্তের দিকে চলেছে , আসলে সীমান্তে কি হচ্ছে আমরা জানি না , আমরা চীনের বিরুদ্ধে বদলা চাই , যুদ্ধ চাই , আমাদের রণ হুংকারে সোশ্যাল সাইট পরিপূর্ণ , আসলে আমরা যুদ্ধকে কখনো সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করিনি তাই যুদ্ধ চাই। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও যুদ্ধক্ষেত্রের নিষ্ঠুরতা তো সেই জানে যে যুদ্ধ করেছে তাই সৈনিকরা হয়তো অত সহজে যুদ্ধ চান না। সীমান্ত যুদ্ধ হোক বা না হোক দেশের অভ্যন্তরে বাকযুদ্ধ জারি আছে। যে দেশ বরাবরই শত্রুর পরিচয় দিয়েছে তাদেরতো বয়কট করতেই তা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না । চায়না-পাকিস্থান ইকোনমিক করিডোর করতে সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে সিক্সটি টু বিলিয়ন ডলার সেখানে চায়না তার চাইতে অনেক বেশি রপ্তানি বাণিজ্য করে ভারতে প্রতি বছর। অর্থাৎ এমন একটা ইকোনমিক করিডোর করার প্রয়োজনীয় পয়সা প্রতিবছর আমরা চীন কে দিয়ে থাকি। ইকোনমিক টাইমসের এক সূত্র অনুযায়ী এপ্রিল থেকে নভেম্বর,২০১৯ সময়কালের মধ্যে ভারত চীন কে ১১.০২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে যেখানে চীন ভারত কে করে ৫৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার।সুতরাং চীনা পণ্য যদি আমরা বর্জন করি তাহলে একদিকে যেমন চীনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তেমনি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনেকটাই চাঙ্গা হবে। তাহলে এক্ষেত্রে ভারত সরাসরি চীনের পণ্য আমদানি বন্ধের রাস্তায় হাটে না কেন ? এক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান বাধা উভয় দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য তাই উদার অর্থনীতির অঙ্গ হিসেবে কোন দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে এই ধরনের বাণিজ্যিক অবরোধ করতে পারেনা সে ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাছাড়া ইলেকট্রনিক্স থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটে চীন যেভাবে আধিপত্য কায়েম করেছে তার কোন বিকল্প এই মুহূর্তে রাতারাতি সম্ভব নয়। সরকারের "মেক ইন ইন্ডিয়া" বা ছোট শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য "মুদ্রালোন " এর মতো প্রকল্প বিশবাও জলে যা সময়সাপেক্ষ Iঅপরপক্ষে চীন প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে যে পরিমান রপ্তানি বাণিজ্য করে ভারতের বাণিজ্যকে যদি দেখা হয় শতাংশের পরিমাণে তা ৩ শতাংশের বেশি নয়।সেক্ষেত্রেসরকারি ভাবে চীনা সামগ্রী আমদানী বন্ধ করা সম্ভব নয়। এই ধরণের চিন্তাভাবনা অনেকটা নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার ব্যর্থতার ইতিহাস কে মনে করে দেয়। তাই বর্জন যদি করতে হয় তাহলে আমরা পর্যায়ক্রমে একে শুরু করাই শ্রেয় হবে। প্রাথমিকভাবে যেসব চীনা পণ্যের রিপ্লেসমেন্ট এক্ষুনি সম্ভব আমাদের স্বদেশী পণ্য দিয়ে সে দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত তারপর ধীরে ধীরে সার্বিকভাবে পণ্য বর্জনের পথে হাঁটা বোধহয় সঠিক সিদ্ধান্ত হবে ।
তথ্য সূত্র : ইকোনমিক টাইমস ও উইকিপিডিয়া